নিলয় বরণ সোম
গোড়ার কথা ও খানিক কাব্যি চিন্তা
আমার স্কুল শিক্ষা ভারতের উত্তর পূর্ব কোণের এক ছোট্ট রাজ্য ত্রিপুরায়। যেই স্কুলে আমার পড়াশুনা শুরু, সেখানে সহজ পাঠ, টেক্সট হিসেবে তালিকাভুক্ত ছিল না কখনও I সুতরাং, দুলে দুলে, ‘ হাট বসেছে শুক্রবারে/ বক্সীগঞ্জে,পদ্মাপাড়ে’, আমার মুখস্থ করা হয় নি I তবে অনেক কিছু যেমন জীবনের মধ্যে এসে যায়, ‘আমি তো এমনি এমনি খাই ‘ এর মত , হাট কবিতাটি তার অপরূপ চিত্রকল্প নিয়ে হাজির হয়েছে আমার কাছে, তুলনায় পরিণত বয়সে ।
তবে নবম কী দশম শ্রেণীতে, যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তর লেখা, ‘হাট’ শীৰ্ষক কবিতাটি পাঠ সংকলনের অন্তর্ভুক্ত ছিল । গভীর দ্যোতনার এই কবিতাটি প্রশ্নকর্তাদের হাতে একটি মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে ধরা দিত,’ ‘হাট’ কবিতার মাধ্যমে কবি কিভাবে বিশ্বসংসারকে এক হাটের রূপক হিসেবে দেখিয়েছেন, আলোচনা করI’ আমরা যারা বাঁয়ে সিঁথি কেটে ফার্স্ট সেকেন্ড বেঞ্চে বসতাম, গড়গড় করে সে প্রশ্নের উত্তর লিখে ফেলতাম , তবে ক্লাসের অনেকেরই হয়ত এপ্রশ্নের উত্তর দিতে প্রত্যঙ্গবিশেষ বিস্ফোটিত হয়ে থাকবে ।
আরও ছোট বেলা ,কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর লেখাচন্ডী মঙ্গলের থেকে নেয়া ,’ ভাঁড়ু দত্তের বেসাতি’ বলে একটি পদ্য ছিল, সেখানে শ্রীল শ্রীযুক্ত দত্ত কি নিপুন কৌশলে বিক্রেতাদের জব্দ করতেন,তার একটা বর্ণন আছে ।
তবে দত্ত বাবুর মত কৌশলী হওয়া দূরস্থান- ক্রেতা হিসেবে খুব একটা দরের নেই , সে শুধু আমি তেমন দরদাম করতে পারি না বলে নয় ।গোড়ার কথা , জিনিস আমি খুব ভালো চিনতে পারি না এবং কখনো সে দাবি করলে, বিরুদ্ধ সাক্ষ্মীর অভাব হবে না । তা ছাড়া , ‘উচ্চ করি শির ‘ জীবনমন্ত্রে বলীয়ান হবার পর , ঝুঁকে নীচু হয়ে আলুটা পটলটা বাছতে মন চায় না।
সুতরাং বাজারে গিয়ে , জিনিসপত্র কেনার অছিলা নয়, সুযোগে, আমার যেটুকু ‘কোর কম্পিটেন্স ‘ আমি তাই করি I অর্থাৎ, বিকিকিনির ব্রাম্হমুহৃর্তে, ক্রেতা -বিক্রেতার হরেক রকম কান্ড কারখানা লক্ষ্য করি ও মন ক্যামেরায় বন্দী করার চেষ্টা করি, এ লেখা তারই ফলশ্রুতি , সফল হলাম কিনা বিচার করবেন পাঠককূল।
দোকানির মুখনিঃসৃত রত্নরাজি
প্রথমে বলি অমল -বিমলের কথা । যমজ বলে ভ্রম হলেও অমল বড়, বিমল ছোট I ক্ষিপ্রহস্ত , চৌখশ দুই ভায়ের আলুর ব্যবসা, যৌথ কারবার । কেন্দ্র কি রাজ্য সরকারের ডি এ বৃদ্ধি হলেই দিয়ে ওরা সে কথা জানাতে ভুলত না, ভুলত না দাম বাড়াতেও। তবে কোনও এক সাম্প্রতিক শীতে এহেন হরিহর আত্মা, হরিহর ও বুক্কার ব্যবসা ভাগ হয়ে গেল । আদি জায়গাটিতে দেখা গেল ছোটভাই বিমল জাঁকিয়ে বসে হাঁক ডাক পাড়ছে , অনতিদূরে, কিছুটা নিষ্প্রভ অমল ।
দুর্বলের প্রতি মমতাবশত:,অমলের কাছেই গেলাম । দেখলাম,আরেকজন বাজারু দুই ভাইয়ের ‘পৃথকান্ন’ হবার ইতিহাস শুনছেন ।
অমলের ভাষ্য ছিল এরকম , ” আমার ভাইয়ের লাইগ্যা পরান কান্দে , ভাইয়েরও লাগে আমার লাইগ্যা – কিন্তু ফরেন এলিমেন্ট ঢুইক্যা পড়লে কী হয় বুঝেন না ?”
বুঝলাম, স্বীয় ভার্যা এবং ভাতৃবধূ , অমলের বিশ্বাসমতে , বিদেশী অনুপ্রবেশকারী – সাংসারিক ডাইনামিক্সের এরকম ব্যাখ্যা ক’জন সমাজবিজ্ঞানী করেছেন জানি না ।তবে একটু গর্বের সঙ্গে সে আরো বললো, ‘জায়গাটা ছোট ভাইরে ছাইড়্যা দিলাম – সেক্রিফাইস বড়দেরই করতে হয় ।’
আমি অমলের মুখের দিকে তাকালাম । মনে হল, অন্তত সেই মুহূর্তে এক আদ্যন্ত আদার ব্যাপারী আলুবিক্রেতা অমল , অমলকান্তি হয়ে গিয়েছিল – তার ছটা ছড়িয়ে পড়েছিল চারদিকে।
পরের গল্প, বিক্রেতাদের পারস্পরিক কথপোকথনের ।
একজন বিক্রেতা, অন্য কোনো এক ব্যবসাদারের সম্বন্ধে তার প্রতিবেশী বিক্রেতাকে বলছিল, ” ওর ব্যবসা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে । লক্ষ্মী ওর কাছে বাঁধা । “প্রতিবেশীর বক্তব্য , ” লক্ষ্মীর সাথে সাথে কুবেরকেও সন্তুষ্ট রাখতে হয় যে!তোর জমানোর অভ্যাস একেবারে নেই! ” আমি অবাক হয়ে একটাই কথা ভাবছিলাম নিগূঢ় অর্থনীতির সরল, ব্যাখ্যা যাদের মুখে মুখে ফোটে, সেই সব ব্যাপারীরা কী করে চিটফান্ড গুলোর বলি হয়ে যায় কে জানে ! হাতের কাছে পরিসখ্যান নেই বটে , তবে সঞ্চয়িতা থেকে রোজ ভ্যালি -সারদা , সব চিট ফান্ডের অন্যতম বধ্যভূমি হল চাতালে বা রাস্তায় সারি সারি বসে থাকা দোকানীরা।
কলকাতার বাজারে ব্যাপারীদের স্বাভাবিক দক্ষতা হল ক্রিকেট ও ফুটবল খেলায় I স্পিন, পেস , ব্যাকভলি, খেলার কূটকৌশল , সব তাদের নখদর্পনে । আমার তো মনে হয় খেলার মরসুমে , যেসব ব্যাপারীর দাঁড়িপাল্লার কারসাজি করার অভ্যাস, সেটাও ভুলে যায় । তবে জীবন শৈলীর হরেক ট্রেন্ড নিয়েও যে তাদের ‘জানকারি ‘ আছে, সে জেনে তাজ্জব হয়ে গেলাম সেদিন ।
গরমকাল । দিনের তাপমাত্রার মতোই হুহু করে বাড়ছে সব্জীর দাম, তিরিক্ষী হচ্ছে ক্রেতার মেজাজ I তার মধ্যে এক বিক্রেতার মন্তব্য , “জিনিসের দাম তো আগুন, তবে ক্যালোরি ক্যালোরি করে লোকে এখন কম খায় বলে ম্যানেজ হয়ে যাচ্ছে !’ লং স্কার্ট ও টপ পরিহিত এক তরুণী একটু রোষনয়নে তার দিকে তাকালেও, বিক্রেতার ভাবান্তর হয় নি তাতে।
ওকে মনে মনে স্যালুট জানিয়ে বেশী দামেই কিনে ফেললাম খানিকটা পটল।
তবে এদের সকলের থেকে বাম্পার কথা শুনেছি এর মুরগী বিক্রেতার সহকারীর কাছে । তার চালচলন আধুনিক, হাতে স্মার্টফোন I মুরগি কাটতে কাটতে আরেক সহকারীর সঙ্গে তার বাক্যালাপ চলছে । কথায় কথায় তার দৃপ্ত ঘোষণা , “আমি স্পেশাল কিছু না, তবে লিমিটেড এডিশন”।
ছেলেটির কথা শুনে আমাদের মুখ হাঁ হল বটে, তবে মাছিগুলো মেঝেতে পড়ে থাকা মুরগীর রক্ত চাটছিল বলে, মুখে ঢুকতে পারে নি ।
এরকম তাক লাগানো কথা পাড়ার বাজারের মাছওয়ালার কাছেও শুনেছি সেদিন।
এক ক্রেতা , দাম কমানোর তাগিদেই হোক, বা যে কোনো কারণেই হোক, মাছওয়ালাকে বললেন , ” এ তো মরা মাছ ভাই !” মাছওয়ালার চটজলদি জবাব , ” বাবু মাছ জ্যান্তই ছিল , এর ডেথ সার্টিফিকেট লেখা হয়নি এখনো!”
এক রসিক ক্রেতা পটলের খুব বেশি দাম শুনে বলেছিলেন , দাদা এ পটল খাবার না তোলার? শুনে দোকানি বললে মরতে ইচ্ছে হোলে আমার দোকানের বাইরে গিয়ে মরুন, এখানে কেন!
এর উপর দিয়ে যায় বোধকরি বয়স্ক এক সবজিওয়ালা ।
একটু ওপরচালাকি দেখানোর জন্য এক ভদ্রলোক বয়স্ক সেই সব্জিওলাকে তুই তোকারি বললেন, “ কি রে , এগুলো কী শাক নিয়ে এসেছিস ? এগুলো মানুষে খায় না জানোয়ারে খায় ? সব্জিওলার নিস্পৃহ উত্তর, “বাবু , এগুলো মানুষেই খায় I জানোয়ারের গুলো যখন আসবে ,তখন আপনাকে খবর দেব !”
বলা বাহুল্য,বিনা বাক্যব্যয়ে ভদ্রলোকের চকিত প্রস্থান, সে স্থান থেকে।
এবার মনসুরের কথা বলি I দাড়ি ও ফেজ টুপি পরে ও নানান পসরা নিয়ে বসে , ইংরেজি বলার খুব শখ তার । সুতরাং দাদা কাকা বৌদি এসব ডাক তার কাছে অচল, সকলেই আঙ্কল আর আন্টি।
একদিন ঝিঙে কী উচ্ছে মাপতে মাপতে বলতে লাগল, “ছোটবেলা আমাদের স্কুলে শিখিয়েছিল, এ লিটল লার্নিং ইজ এ ডেঞ্জারাস থিং- কিন্তু সত্যি ই তাই ? এই পৃথিবীতে যত কিছু ডেঞ্জারাস আছে , তা কি লিটল লার্নিংয়ের লোকেদের করা ?”
আধুনিক সভ্যতার , পৃথিবীর অস্তিত্বের সম্বন্ধে এর থেকে অমোঘ সত্য বোধহয় আর হয় না I এ সত্য মনসুরের নিশ্চয়ই ক্ষনিকের উচ্চারণও নয়, জীবনের উপলব্ধি I এই উপলব্ধিতে আমরা সকলে পৌঁছতে পারবো কি ? জানি না ।
বাজার ও জেন্ডার
বাজার করার মধ্যে একটি সাধারণ জেন্ডার বিভাজন আছে। বাঙালি সমাজ মূলত এই বিশ্বাস পালন করে এসেছে যে বাজার করাটা পুরুষদের কাজ , বাজারলব্ধ অমূল্যরতন বা মতান্তরে ছাইপাঁশ রান্নার দায়িত্ব মেয়েদের। এ সত্বেও স্বাধীনতা-উত্তর ভারতে বাজারের ব্যাগ হাতে যে মহিলাদের দেখতে পাওয়া শুরু হয়েছে , তারা হয় প্রোষিতভর্তিকা , নয় বিভিন্ন কারণে একক জীবন যাপন করেন , অথবা বাড়িতে পুরুষ সদস্য নিতান্ত শিশু বা অন্য কোন কারণে চলচ্ছক্তি অপারগ।
আজকাল চিত্র অনেকটা বদলেছে , অনেক ক্ষেত্রেই স্বামী স্ত্রীকে যৌথভাবে বাজার অভিযানে দেখতে পাওয়া যায়, কোন কোন মহিলা স্কুটি চালিয়ে একাই চলে আসেন।তবে অনেক পুরুষ যেমনি লুঙ্গি-ফতুয়া পরে চাষাড়ে বিক্রমে বাজার করতে আসেন , মহিলারা তাদের স্বাভাবিক সৌন্দর্যবোধে , টপ -পালাজোর ম্যাচিং, জিন্স -টপের কন্ট্রাস্ট , কপালে বিন্দিয়া বা টিপ্ ও চোখে হালকা আই লাইনার দেওয়ার মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি বিস্মৃত হন না বাজার কালেও।অনেকে পুরুষও তেমনি লুঙ্গি নয়,পাজামা -পাঞ্জাবি , শার্ট -প্যান্ট এমনকি শীতকালে কোট -প্যান্টের উপর মাঙ্কি টুপি পরে বাজারে আসেন। তরুণতর প্রজন্ম অবশ্য হাফ পেন্টুল পরে শালপ্রাংশু অথবা মুরগীর ঠ্যাং সদৃশ, রোমশ অথবা নির্লোম পা নিয়ে বাজার করতে পিছ পা ননI এই ফ্যাশনে সামিল অট্টালিকা বাসী কোন কোন পক্ককেশ প্রৌঢ়ও , বেশ একখানা এন আর আই বা আই টি সেক্টর ভাব ফলিয়ে!
তবে বাজার করার প্রেক্ষাপট যদি শপিং মল হয়, তবে সেখানে ডমিনেন্ট প্লেয়ার কিন্তু নারীশক্তি।স্বামী বা সঙ্গীর সেখানে ভূমিকা মূলত ট্রলি ঠেলা ও ইতি উতি দেখার। সে যাই হোক,পাড়ার বাজারে মহিলাদের না আসার অন্যতম কারণ এগুলো বড় নোংরা। আমার শিলংয়ে জন্ম এমন একজন সহপাঠিনী ছাত্রবেলায় অনুযোগ করেছিল, তোদের বাজারহাট গুলো খুব নোংরা , অন টপ অফ ইট , হিচড আপ লুঙ্গিস ! খানিকটা মাতৃতান্ত্রিক শিলংয়ে বিক্রেতারা সকলেই মহিলা , বেশ টিপ্ টপ , সেজেগুজে করে তারা বিপনী সামলানI তবে শিলংয়ের সেই বিপনী সুন্দরীদের থেকে কোন কিছু কেনার সৌভাগ্য আমার হয় নি, সুতরাং আমাদের বঙ্গের আদি ও অকৃত্রিম বাজারে ফিরি।
বাজার করার কতক তকনিক
সাধারণ এই জেন্ডার বিভাজন মেনে নিলে , প্রত্যেক পুরুষ নিজেকে চলনসই বাজারু মনে করেন , কেউ কেউ সেরা বাজারুও। তবে তাদের স্ত্রীরা বোধহয় একমত নন , পৃথিবীর সব বিক্রেতা সবথেকে ওঁচা জিনিস সব থেকে বেশি দামে তার স্বামীরত্নকে গছিয়ে দিয়ে থাকেন , এই ধারণা তাদের দূরপনেয়। তবে সেলিব্রিটিদের মধ্যে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বাজার করতে ভালবাসেন , ভাল বাজারও করেন তেমন খ্যাতি আছে। একবার ওঁর কাছ থেকে লেখা নিতে গিয়ে ওঁর নিজের মুখেই শুনেছি সে কথা।
আগেই বলা আছে, আমি ভাল বাজারু মোটেই নই I তা ছাড়া , ‘উচ্চ করি শির ‘ জীবনমন্ত্রে বলীয়ান হবার পর , ঝুঁকে নীচু পড়ে আলুটা পটলটা বাছতে মন চায় না। বলতে গেলে সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিঙ কথাটি আবিষ্কারের আগেই আমি সেটি মেনেই বাজার করি ।
সুতরাং ভাল বাজারুর অন্তত একটি গর্ব , ‘বাছার জিনিসটি এনেছি , সেটি আমার নেইI তবে নিজেদের ভাল বাজারু মনে করেন এমনতর লোকজনের কিছু টেকনিক আমার নজরে এসেছে , লোকহিতায় সেগুলো পরিবেশন করি।
কিছু লোক আছেন, যারা কেনাকাটা শুরু করার আগে পুরো বাজারটা একবার চক্কর মেরে নেন। কোথায় দাম কম, কোথায় টাটকা সব্জী বা মাছ , সেসব সম্বন্ধে প্রাথমিক ধারণা হয় তাতে। তবে বেশ কবছর হল বাজারের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত মাছ বা সবজির দামে খুব একটা হেরফের হয় না , অর্থনীতির ভাষায় যাকে পারফেক্ট কম্পিটিশন বলে সেরকম অবস্থা প্রায়। কিন্তু ধ্রুপদী বাজারুর পক্ষে মার্কেট সার্ভে করার অভ্যাস ত্যাগ করা মুশকিল I
নীললোহিতের ‘একুশ বছর বয়সে ‘ উপন্যাসে নীলুর মা পই পই করে বলে দিতেন , ‘ গাঁয়ের সরল চাষিদের ‘ থেকে জিনিস কিনতে।তবে গাঁয়ের সরল চাষিরা শহরের বাজারে আদৌ বিক্রি বাটা করতে আসেন কিনা সেব্যাপারে আমার সন্দেহ আছে , যদিও অনেক বিক্রেতাই দাবি দাবি কররেন , খেয়ে দেখুন স্যার, দেশি মাল আছে !
অনেক বাজারুর কেরামতি দেখা যায় মাছের বাজারে। মাছটি হাতে নিয়ে পেট টিপে , মাছের কানকো উল্টে কি রীতিমত গবেষণা করে তবে মাছ ঘরে তোলেন। অনেক মাছওয়ালা অবশ্য তাদের উপর প্রসন্ন থাকেন না।একজনের কথা জানি , ইলিশ মাছ নরম হতে পারে মনে করে একটু টিপে দেখতে যেতেই মাছ ওলা ঠাট্টা করে বললো, অত আস্তে টিপে কী হবে , একবার মাছের উপর দাঁড়িয়ে দেখুন না একটুও টসকাবেনা এরপর থেকে আর ভদ্রলোক এই রকম দুঃসাহস দেখিয়েছেন কিনা জানি নাI
এরাই যখন সবজি বাজারে যান, তখন কলাটা মুলোটা পরখ করে তো দেখেনই,ঢেঁড়স বাছতে তাদের সক্রিয়তা দেখার মত। ঢেঁড়সের ডগা গুলো পট পট ভেঙে সেগুলো কতখানি টাটকা পরখ করেন, আর যে বেচারি ঝুড়ি ভর্তি সুঁটো ঢেঁড়স নিয়ে এসেছে বেচবে বলে, তার মুখ কাল হয়ে যায়!
অনেকে বেশ তেল চকচকে জিনিস কেনা পছন্দ করেন, দোকানিরাও বেশ জল ছিটিয়ে , হাওয়া দিয়ে সেগুলোকে দর্শনধারী করে রাখেন এদের জন্য।তবে রসিক বিক্রেতার মত রসিক ক্রেতারও অভাব নেই। অনেকসময় এমন হয়, বিক্রেতা সব্জিতে জল ছেটাচ্ছে তো ছেটাচ্ছেই। ক্রেতা বললেন ” সব্জিগুলোর জ্ঞান ফিরলে এক দু আঁটি পালং শাক দিও।”
অনেকে অনেকে, দর্শনধারী সবজির পেছনে না ছুটে , বলতে গেলে এই মতের ১৮০ ডিগ্রি বিপরীতে গিয়ে, একটু নিষ্প্রভ বেগুন , হলদে ছাটের কপি , এসব কিনে থাকেন Iতাদের বক্তব্য, এগুলোতে নাকি সার কম থাকে। কোন কোন ক্রেতা আছেন ওজন স্পেশালিস্ট। দোকানিরা অনেক সময় আঙুলের কেরামতিতে ওজনের এদিক ওদিক করেন, তাদের শ্যেন দৃষ্টি থাকে সেদিকে। আবার যারা দরাদরিতে দড়, তারা তাদের নিজস্ব টেকনিকে কখনো সফল হন, তবে দোকানি যদি আরো চতুর হয় , উনি ওজন বিশেষজ্ঞ না হন , তাহলে নীট ফল কী হয় কে জানে !
প্রসঙ্গত বলে রাখি, ভালো বাজারও হিসেবে কথাসাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের নাম আছে.I একবার কোন একটি ম্যাগাজিনেই জন্য আশীর্বানী জোগাড় করতে তাঁর কাছে গেছিলাম, তখন কথায় কথায় এই ব্যাপারটি জিজ্ঞাসা করাতে স্মিতহাস্যে উনি ব্যাপারটা সঠিক জানিয়েছিলেন। তবে বলা বাহুল্য , ওঁর বিশেষ কায়দা কি সেটা জানা সম্ভব হয় নি।
আমার নিজস্ব শৈলী
জিনিস চেনার ব্যাপারে আমি নিজে খুব দক্ষ নই, সে কারণে অনেকটা ‘অহৈতুকী ভক্তির’ মত নিজেকে সপেঁ দেই বিক্রেতার কাছে। মোটামুটি নির্ধারিত বিক্রেতার কাছ থেকেই আমার কেনাকাটা, ফল মোটামুটি ভালোই। অনেক সময় ওদের সুপরামর্শ কাজেও লাগে।
থোড় বড়ি খাড়ার থোড় আমার ভাললাগার সবজি। একটি নির্দিস্ট ছেলের থেকে এটি কিনি , অর্থাৎউচ্ছে বেগুন পটল মূলো যার থেকে কিনি , তার থেকে নয় । আমি একদিন সে ছেলেটির কাছে যখন গেলাম , একজন বিজ্ঞ বাজারু দেখি থোড়গুলো নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করছেন, এটা ধরছেন, ওটাতে নখ ডোবাচ্ছেন ,, আরো কত কী ! অবশেষে একটি বড়সড় থোড় পছন্দ করে তার থেকে অর্ধেকটা নিলেন। ভদ্রলোকের পাকা চুল অনেকটা সম্ভ্রম জাগানোর মত , তাই ছেলেটিকে বলাম , বাকি অর্ধেকটা আমায় দিয়ে দাও। ছেলেটি মুচকি হেসে অন্য একটি থোড় থেকে খানিকটা কেটে আমাকে দিয়ে দিল, ” বললো, এটা আরো ভালো – উনি কী বুঝে ওটা নিলেন জানি না ! ” আমি বললাম , ” ওকে সেটা বল নি কেন ?” ছেলেটির সহাস্য জবাব, ” উনি আমাকে বিশ্বাস করতেন না !”
ফলবিক্রেতাও আমার নির্দিষ্ট। আপেল কলা পেঁপে যখন যা মনস্থ হয়, ওর থেকেই কিনিI ফল হিসেবে পাকা পেঁপে খেতে খুব ভাল না হলেও , বাড়িতে প্রায়ই নিয়ে আসি।
একদিন পেঁপে কেনার পর বিক্রেতার পরামর্শ , ” বাড়িতে গিয়া এমনে রাইখা দিবা – ফ্রিজে ঢুকাইবা না !”
আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ” গত সপ্তাহেই তো তুমি ফ্রিজে রাখতে বলেছিলে !
ছেলেটির এবার জবাব, ” শুন ,পেসেন্ট যখন হাসপাতালে ভর্তি হয় , ডাক্তার কি সকলেরই আই সি ইউ তে ভর্তি করে ? কারু কারুরে তো জেনারেল ওয়ার্ডে দিয়া দেয় !”
বিক্রেতার চরণে মনে মনে শত কোটি প্রণাম জানিয়ে আমি পেঁপেটি ব্যাগস্থ করলামI
তবে আমার এই প্রণালী যে সব জায়গায় প্রযোজ্য হবে তার মানে নেই। সুতরাং অভিজ্ঞ বাজারুরা তাদের অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান দিয়ে যতখুশি কেনা কাটা করুন, আমার আপত্তি নেইI আর আপত্তি করলেই বা শুনছে কে ! সুতরাং আমি যাই পরের প্রসঙ্গে।
অথ বাজার বিভ্রাট
বাজার করেছেন কিন্তু কোন বিভ্রাটের কবলে পড়েন নি এরকম লোক সংসারে বিরল। জাম কিনতে গিয়ে জামরুল কিনেছেন এবং বাড়িতে অল্প বিস্তর কথা শুনেছেন, এরকম অভিজ্ঞতা অনেকেরই আছেI এরকম বিভ্রাট ঠেকানোর জন্য বাজারের লিস্টি, হোয়াটস্যাপ , ফোন কল ইত্যাদি প্রতিষেধক আছে বটে, তবে সব কি খণ্ডানো যায় ? আর শুধু এই গোত্রের নয়, আরো অনেকরকম প্রমাদ বাজারুদের হতেই পারে , প্রেম নয়, ভুলের ফাঁদ পাতা যে ভুবনে !
এই গল্পটা বাবার কাছে শোনা। বাবার চাকরি জীবন কেটেছে ত্রিপুরায়, আগরতলা ও মফস্বলে। নিজে বাঙাল হলেও বাবা , যাকে কাঠ বাঙাল বলে, তা ছিলেন না। ঢাকাইয়া ভাষায় অভস্ত বাবা সবসময় নোয়াখালী বা খন্ডল অঞ্চলের ভাষা বুঝতেও পারতেন না, চিটাগাং দূর অস্ত। উনি বাজার যে খুব ভাল করতেন সেও নয় -বেশিরভাগ সময় ট্যুরে থাকতেন বলে অনেকসময় বাজারের ভার অন্য কারো উপর ন্যস্ত থাকত বড় ।
এ হেন্ অনিচ্ছুক বাজারু,স্বাভাবিকভাবেই, মাছ কিনতে গেলে রুই কাতলাতেই সন্তুষ্ট থাকতেন বেশি।তা কোন এক শুভ দিনে উনি আগরতলার কোন একটি ব্যস্ত মাছের দোকানে হাজির হয়েছিলেনI রুই -কাতলা দেখতে না পেয়ে মাছওয়ালাকে কিছু একটা জিজ্ঞাসা করাতে সে বলেছিল, ” আউইন্যা মাছI ” মাছ আসছে, এই বিশ্বাসে আধ ঘন্টামত অপেক্ষা করার পর বাবা বুঝতে পারেন, মাছওয়ালা যে মাছ নিয়ে বসেছে, সেটির নাম আউনিয়া মাছ এবং সে সেটাই কিনতে বলছিল !
মাছ কিনতে গিয়ে অন্যরকম বিভ্রাট পরের প্রজন্মে,অর্থাৎ আমার হয়েছিল। রুই মাছের সঙ্গে ট্যাংরা বা মরুলা কিছু একটা নিয়েছিলাম , সেটা কাটতে দিয়ে সবজি বাজারে চলে গেছিলাম। কিন্তু সবজি কিনে ছোট মাছটির কথা একেবারেই ভুলে মেরে দিয়েছিলাম , সুতরাং বাড়ির দিকে অর্ধেক রাস্তা গিয়ে আবার ডবল পরিশ্ৰম করে মাছ উদ্ধার করতে হল – মাছটির স্বাদ অবশ্য খুব ভাল ছিলI
ইলিশ মাছ নিয়ে বিভ্রাটের একটা চালু গল্প আছে, অনেকেই জানেন, তবু বলে ফেলি এখানে। আমার মত আনাড়ি কোনো ক্রেতা , মাছওয়ালার কথা মত একটি সুলক্ষণা একটি ইলিশ কিনে বাড়ি যান, মাছওয়ালা আশ্বাস করেন মাছটি অতি সুস্বাদু হবে আর কোনো ডিম্ থাকবে না তাতে। বাড়ি গিয়ে বড় মুখ করে এই গল্প ভদ্রলোক করেছিলেন বটে, তবে দেখা গেল মাছটির পেট ভর্তি ডিম্ ! পরের দিন মাছয়লার উপর তম্বি করতেই সে জিভ কেটে বলে, অল্পবয়সী কন্যা তো, একটা ভুল করে ফেলেছি আরকি ! মাছটি এমনিতে নিশ্চয়ই খারাপ ছিল না ,ইত্যাদি ইত্যাদি !
একবার ভাষার ঝামেলায় বিভ্রাটে পড়েছিলাম, হ্যাবরণী থাকার সময়। আফ্রিকার দক্ষিণের ওই শহরটিতে এমনিতে হাট বাজার বলে বিশেষ কিছু নেই – আছে শুধু শপিং মল। তবে মলের সামনে অনেকসময় ভ্রাম্যমান বিক্রেতারা এটা সেটা বিক্রি করে। কোনো এক সপ্তাহান্তের বাজারে , এমনি এক বিক্রেতার কাছ থেকে গোল গোল কমলালেবু ‘দেখতে পেয়ে কিনে নিলাম এক ডজন। বাড়িতে গিয়ে দেখি – কমলালেবু কোথায় -এ তো মুসম্বি !ঠেকে শিখলাম , কমলালেবু কে ওরা বলেন naartjie আর আর অরেঞ্জ হল মুসম্বি!
এই ঘটনাটি যখন ঘটে ,সেই সময় হ্যাবরণীতে আমি এক বাঙালী দাদার বাড়িতে অতিথি হিসেবে ছিলাম।হিমাংশুদা কন্ট্রাক্ট শেষ করে চলে যাবেন, এবং তার কোয়ার্টটিতে আমরা থাকব,এরকম একটা অলিখিত চুক্তি হয়েছিল হাউসিং ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে।হিমাংশু দা আমার চার বছরের ছেলেকে খুব ভালবাসতেন , বাজার করতে প্রায়ই নিয়ে যেতেন ওকে,গাড়ি চড়তে পেয়ে আমার ছেলেও খুশি থাকত।এমনি একদিন দেখি উনি অন্যান্য জিনিসের সঙ্গে এক বস্তা কুমড়ো নিয়ে এসেছেন।প্রসঙ্গত,কুমড়োকে ওখানে বাটারনাট বলত ,আকৃতিতে অনেকটা লাউয়ের মত হলেও, বর্ণে ও স্বাদে সেই কুষ্মান্ডই বটে।কুমড়ো এমনি খুব একটা পছন্দের সবজি নয় কারো, তার মধ্যে এক বস্তা কুমড়ো -সুতরাং গ্রীষ্মের সকালে আলোড়ন উঠল খুব!
হিমাংশুদা রহস্য ফাঁস করলেন তারপর। সুপারমার্কেটে গিয়ে আমার ছেলে নাকি ট্রলি ঠেলতে পেয়ে ভারী খুশি। মার্কেটের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত সে ট্রলি নিয়ে দৌড়েই চলেছে, না যাচ্ছে থাকে থামাতে , না শেষ করা যাচ্ছে বাজার।অতএব ওকে থামানোর জন্য বিশ্বাসদা ট্রলিতে চাপিয়ে দিয়েছিলেন এক বস্তা কুমড়ো।এরকম অভিজ্ঞতা ইউনিক সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই আমার।
পরের বিভ্রাটটি সাম্প্রতিক হলেও চ্যাম্পিয়ন বিভ্রাট বটে । বিভ্রাটের আগের গল্পটা শুনেনেওয়া জরুরী, ব্যাপারটা বুঝতে গেলে I আর কিছু নয় ,গত দু’ এক বছর ধরে আমার প্রতিবেশী পাড়ায় বসবাসকারী এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু সপ্তাহে কী দু’সপ্তাহে অনতিদূরের এক মাছের বাজারে মৎস শিকারে যান নিজ গাড়ি হাঁকিয়ে। এটি একটি কমিউনিটি প্রজেক্ট , গাড়িতে উনি ছাড়া ওর আবাসনের আরো দু এক জন থাকেন , আমিও মাঝে সাঝে যোগ দেই। মাছ যা কেনার সে তো হয় , তার সঙ্গে রাজা উজির মারা হয় বিস্তর।
এমনই কোনো এক শনিবারে মাছ কেনার পর আমার মনে হল, বিকেলে অতিথি সমাগম আছে, প্রবাসী অতিথিবর্গকে কচুরি খাওয়ালে কেমন হয় ! সেই বাজারের কাছে একটি দোকানে দারুন কচুরি করে। বন্ধু ও তার সঙ্গীদের বাজার করা তখন শেষ হয় নি, ওদের কিছু না বলেই আমি গেলাম কচুরির দোকানে – হিসাবমত কচুরি অর্ডার করলাম। দোকানিকে এও জিজ্ঞাসা করলাম, সঙ্গে কী আছে, ছোলার ডাল না আলুর দম।
আমার কেনা কাটা শেষ হতে না হতেই মোবাইলে বন্ধু ডাক দিতে লাগল- বুঝলাম, ওদের বাজার শেষ ! সুতরাং কচুরি আলুর দমের দুটি ঠোঙা নিয়ে আমি দৌড় লাগলাম গাড়ির পানে।
বিকেলে অতিথি আসার পরে খাবার গরম করার মুহূর্তে আবিষ্কৃত হল , কচুরি আলুর দম নয়, আমি নিয়ে এসেছি দুই ঠোঙা কচুরি ! বুঝতে পারলাম, আমার পাশে যে ক্রেতাটি খুব সম্ভবত বাড়ির জলযোগের জন্য এক ডজন কচুরির অর্ডার করেছিলেন, তাড়াহুড়ায় আমি তার ঠোঙাটিও নিয়ে এসেছি , আর ওই ভদ্রলোক নিশ্চয়ই দুই ঠোঙা আলুর দম নিয়ে বাড়ি গেছেন ! ভদ্রলোকের কথা ভেবে ভারী কষ্ট হয়েছিল সেদিন!
শেষ কথা
এই লেখা যখন তৈরী করছিলাম, তখনও মার্কেটে করোনা আসে নি।ক’দিনের মধ্যেই পুরো বাজার ব্যাপারটাই বিভ্রাট হয়ে যাবে কে জানত! লেখাটির শেষ লগ্নে এটাই মনে হচ্ছে ,আমরা আবার বাজার করতে পারবো কিনা, অথবা ওই যে আলু বেচতে আসা অমল-বিমল, ওই যে কথায় কথায় ইংরেজি বলা মনসুর , ওই যে ক্ষুরধার বুদ্ধির ফলবিক্রেতা, আর হরেক শাক বেচতে আসা খুনখুনে বুড়ি, ওদের সবাইকে আবার দেখতে পাব তো ? কিংবা ওরা আমাকে ?
মানবসভ্যতা যদি এই করোনাকাল কাটিয়ে উঠতে পারে, তবে যতদিন এরকম হাট বাজার থাকবে , এরকম কথা , এরকম ভাব বিনিময় হতেই থাকবে I বাজার থেকে থলিটি রেখে, হাতে খবরের কাগজ পড়তে পড়তে কৌতুক ভেসে উঠবে মুখে, কিংবা মনসুরের মত বোধ জাগানিয়া কথা তাড়া করবে আমাদেরI
আরও ক’ বছর পরে, অন্যান্য অনেক দেশের মত , হয়ত টিনের ছাউনি দেওয়া , চাতালের উপর মিউনিসিপ্যালিটির স্থায়ী বাজার, কিংবা রাস্তার দুধারে বসা পুলিশ আর পার্টিনেতাদের হপ্তা দেওয়া বাজার উঠে যাবে – বাজার বলতে বোঝাবে শুধুই সুপারমার্কেট বা হাইপারমল I তবে সেদিনও , গরমে ঘেমে অস্থির, টাই পরা কন্ট্রাক্ট কর্মী ছেলেটি দাদা বৌদি কি আঙ্কল আন্টির সঙ্গে হেসে একটু কথা বলবে , সেলস কাউন্টারের মেয়েটি ফ্রেশ ভেজিটেবলেস আছে, নেবেন স্যার , বলার ফাঁকে দেখে নেবে ঝকঝকে হাই হিল পড়া তরুণীটি কোন ক্রিমটি বেছে নিল, সেদিনও গাড়ি চালাতে চালাতে স্বামী স্ত্রী বা লিভ ইন পার্টনারযুগল কিছুক্ষনের জন্য হলেও, হয়তো বা এই সব গল্প করবেI
তবে আরো যদি এগিয়ে যাই , এমন সময় বিচিত্র নয় যখন , বাজার বলতে কিছু থাকবে না , থাকবে শুধু অনলাইন কেনা বেচা I
কিন্তু, যেদিন ভাবলেশহীন মুখে, অথবা এক গাল সিনথেটিক হাসি মেখে যন্ত্রমানব বা মানবী নিয়ে আসবে হপ্তা কি মাসের ফুড কার্ট , হোম ডেলিভারির জন্য ? হোম বলতে সত্যিই কিছু থাকবে সেদিন?